কানাডার অভিবাসন প্রক্রিয়ার কিছু অংশে নজিরবিহীন জট তৈরি হতে পারে। কিছু স্থায়ী বসবাসের (পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি) প্রোগ্রামে আবেদন নিষ্পত্তির সময় ৫০ বছর পর্যন্ত হতে পারে বলে জানিয়েছে ইমিগ্রেশন, রিফিউজি অ্যান্ড সিটিজেনশিপ কানাডা (IRCC) । এমন পরিস্থিতিতে হতবাক হয়ে পড়েছেন আবেদনকারী ও অভিবাসন আইনজীবীরা।
সম্প্রতি কানাডার শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম সিবিসি নিউজ এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে কয়েকটি ভূক্তভোগী পরিবার ও আইনজীবীর সাক্ষাতকার নেয়া হয়েছে।
যেমন ইউক্রেনের কিয়েভ থেকে যুদ্ধের সময় পালিয়ে ২০২৩ সালে কানাডা-ইউক্রেন জরুরি ভ্রমণ অনুমোদন কর্মসূচির আওতায় অটোয়ায় আশ্রয় নেয়া ওলহা কুশকোর পরিবার। তার অভিজ্ঞতা থেকে যিনি বলছেন,
“আমরা হতবাক। এর কোনো মানেই হয় না। আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না।”
কুশকো পরিবার মানবিক ও সহানুভূতিমূলক (Humanitarian and Compassionate) প্রোগ্রামে জুন মাসে স্থায়ী বসবাসের আবেদন করেছেন। শুরুতে তাঁদের জানানো হয়েছিল দুই বছর সময় লাগতে পারে। কিন্তু এখন IRCC-এর ওয়েবসাইটে বলা হচ্ছে—অপেক্ষা করতে হতে পারে ১০ বছরেরও বেশি সময়।
IRCC-এর সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, অন্যান্য অভিবাসন পথেও দীর্ঘ বিলম্ব দেখা যাচ্ছে যেমন, ৯ বছর পর্যন্ত কেয়ারগিভার প্রোগ্রাম, কৃষি-খাদ্য খাতে ১৯ বছর পর্যন্ত, উদ্যোক্তা ও স্টার্টআপ ভিসা প্রোগ্রামে ৩৫ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করার কথা বলা হচ্ছে।
এসব বাস্তবতাকে অটোয়ার অভিবাসন আইনজীবী ক্লেয়ার হুকায়েম জানিয়েছেন, “যদি এসব সময়সীমা সত্যি হয়, তাহলে এটি অবিশ্বাস্য। আমার ক্লায়েন্টরা আতঙ্কিত।”
ভ্যাঙ্কুভারের আইনজীবী স্টিভেন মিউরেন্স বলেন, “অভিবাসন আবেদন প্রক্রিয়া ৫০ বছরে পৌঁছানো কানাডার ইতিহাসে শোনা যায়নি। সরকার হয়তো বিপুলসংখ্যক আবেদন বাতিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে।”
তবে IRCC দাবি করছে, সময়সীমাগুলো কোনো ভুল নয়। বিভাগের যোগাযোগ পরিচালক লরা ব্লঁদো বলেন,“আমরা যতটা সম্ভব স্বচ্ছ থাকতে চাই। অভিবাসন ব্যবস্থাকে ভারসাম্যে ফেরাতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”
অন্যদিকে, বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, বিল C-12 পাস হলে মন্ত্রীকে ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হবে, যা কিছু আবেদন একসঙ্গে বাতিলের পথ তৈরি করতে পারে। অটোয়ায় বসবাসরত কুশকো পরিবার এখন গভীর অনিশ্চয়তায়। তাঁদের কাজের অনুমতিপত্র আগামী বসন্তেই শেষ হবে।“আমাদের ফেরার মতো জায়গা নেই,” বলেন কুশকো। “আমি শুধু আমার ছেলেদের জীবিত ও সুখী রাখতে চাই।”
সরকারি নথিপত্রে দেখা হয়, বর্তমানে কানাডাতে ১ লাখের বেশি বাংলাদেশী বসবাস করছেন। নানা ক্যাটাগরীতে এ সংখ্যা সব মিলিয়ে দেড়লাখের কাছাকাছি হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। ২০২১ সালে কানাডা সরকারের আদমশুমারী অনুযায়ী ভারতের ৮ লাখ ৯৮ হাজার, আফ্রিকার ৮ লাখ ২১ হাজার ও ফিলিপাইনের ৭ লাখ ১৯ হাজার নাগরিক কানাডায় বাস করছেন। ২০২১ সালের শুমারীতে দেখা যায় সে সময়ই কানাডাতে বাস করা ইউরোপের দেশগুলোর নাগরিকের মিলিত এ সংখ্যা ২০ লাখের কাছাকাছি। মুলত, পৃথিবীর শতাধিক দেশের বিপুল সংখ্যক নাগরিকের বসবাস রয়েছে অভিবাসনকে স্বাগত জানানো কানাডায়। অভিযোগ রয়েছে, আর তার সুযোগ নিয়ে বহু মানুষ কখনো কখনো মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতারণামুলকভাবেও এ দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ খুঁজে নিয়েছে।

