সরকার বলছে, কাছাকাছি এসে এই বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে। শুধু তাই নয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস তার সাম্প্রতিক ভাষণে একই দিনে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দিলেও বিরোধ মেটেনি বরং বাড়ছেই।
জাতীয় সংসদ ভবনে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে হাসিমুখে জুলাই সনদ স্বাক্ষর করলেও ওই সনদে থাকা গণভোট নিয়ে বিস্তর দূরত্বে এখন বিএনপি ও জামায়াত ইসলাম। যে দুরত্ব একই সাথে তাদের মুখোমুখি করেও দিয়েছে।
ফলে গণভোট নিয়ে উত্তপ্ত হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতি। বিএনপি বলছে, গণভোট ঘোষণা অনুযায়ি হতে হবে জাতীয় নির্বাচনের দিনই। জামায়াত এখনো বলছে, গণভোট জাতীয় নির্বাচনের আগেই হতে হবে। অন্যদিকে জুলাই আন্দোলনের দাবিদার দল এনসিপি বলছে, আগে গণভোট হবে। তার ভিত্তিতে হবে পরের জাতীয় নির্বাচন। ফলে এক মুখোমুখি অবস্থায় পড়েছে দেশের রাজনীতি। ঐক্যমত কমিশনের ধারাবাহিক বৈঠকে জুলাই সনদ স্বাক্ষর হবার পর অন্তবর্তী সরকার বলছে, গণভোট নিয়ে দলগুলোকে কাছাকাছি আসতে হবে।
সম্প্রতি রাজধানীর নয়াপল্টনে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার দলের অবস্থান পরিস্কার করেন। তিনি বলেন, গণভোট হলে নির্বাচনের দিনই হতে হবে এবং সেই নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই হতে হবে। তিনি মন্তব্য করেন, ‘অন্যথায় বাংলাদেশের মানুষ কিছুতেই মেনে নেবে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটা রাজনৈতিক দল, তারা জোট বানিয়েছে, চাপ সৃষ্টি করেছে বিভিন্নভাবে যে নির্বাচনের আগেই গণভোট হতে হবে। কেন নির্বাচনের আগে গণভোট হতে হবে? আমরা বলেছি যে, আমরা গণভোট মানছি। সেই গণভোট নির্বাচনের দিনই হতে হবে। কারণ দুটো ভোট করতে গেলে অনেক টাকা খরচ হবে।’
ফখরুল মনে করেন, ‘মূল যে নির্বাচন—জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সেই নির্বাচনের ধারা ক্ষুণ্ন হয়ে যাবে। দুর্ভাগ্য আমাদের, আজকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যাকে আমরা সম্পূর্ণ সমর্থন দিয়েছি, তারা আজকে নিজেরাই একটা অবস্থার তৈরি করছে, যাতে করে নির্বাচন ব্যাহত হয়,’ বলেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘গণভোটের জন্য চাপ দিচ্ছে ওই রাজনৈতিক দলগুলোকে পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, যে নির্বাচনকে বানচাল করার ষড়যন্ত্র করছে। আমরা পরিষ্কারভাবে বলে দিতে চাই, গণভোট হলে নির্বাচনের দিনই হতে হবে এবং সেই নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই হতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশের মানুষ কিছুতেই মেনে নেবে না।’
অন্যদিকে, অন্তর্বর্তী সরকার চালাকি করে গণভোটকে জাতীয় নির্বাচনের তারিখের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।
সরকারের উদ্দেশে আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘জনগণের দাবি আগে গণভোট। ওনারা একটা চালাকি করছে। আমি চালাকি শব্দটা বলছি। চালাকি বোধ হয় অত খারাপ না। যে করব, করছি, এই-সেই করতে করতে এটাকে জাতীয় নির্বাচনের ডেটের (তারিখ) কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তখন বলবে আর তো সময় নেই। আমি এক বিশেষজ্ঞের সাথে আলাপ করেছি। তিনি বলেছেন, তফসিল ঘোষণা হলেও জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আলাদা হতে কোনো আইনগত বাধা নেই। সুতরাং, ঠেলেঠুলে কত দূর নেবেন। তারপরও গণভোট করার সময় থাকবে এবং গণভোটের পরই জাতীয় নির্বাচন হবে ইনশা আল্লাহ।’
সম্প্রতি জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের এক আলোচনা সভায় সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের এ কথা বলেন। জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা এ সভার আয়োজন করে।
বিএনপিসহ কয়েকটি দল চায় আগামী ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের দিনেই গণভোট আয়োজন হোক। কিন্তু জামায়াতসহ ধর্মভিত্তিক আটটি দল নির্বাচনের আগেই গণভোট আয়োজনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে নেমেছে।
আলোচনা সভায় বিএনপিকে উদ্দেশ করে মুহাম্মদ তাহের বলেন, যারা জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট চায় না, তারা কেন চায় না, সেটি জামায়াত জানে। ডাকসু নির্বাচনের পরে তারা আর কোনো নির্বাচন মানতে পারেনি। আর কোনো ‘টেস্ট কেসে’ তারা যেতে চায় না। কারণ, গণভোট জাতীয় নির্বাচনের আগে হলে ৮০ শতাংশ লোক সংস্কারের পক্ষে ভোট দেবে।
তাহের বলেন, জামায়াত ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চায়। তার আগে গণভোট চায়। জনগণ গণভোটে ‘না’–এর পক্ষে ভোট দিলে জামায়াত সেটি মেনে নেবে।
এমনভাবে দলদুটি বিভক্ত হবার পর জামায়াত নেতা তাহের টেলিফোনে কথাও বলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সাথে। তবে সে আলাপে যে কাজ হয়নি তার পরদিনের এমন বক্তব্য সেটাই প্রমাণ করছে।
ফলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে দেয়ার পর এ মুহূর্তে মাঠের প্রধান দুটি দল বিএনপি ও জামায়াত এই গণভোট নিয়ে তাদের বিরোধ কোথায় নিয়ে যায়, তার দিকেই তাকিয়ে আছে দেশের মানুষ।

