৩ লাখ থেকে দেড় লাখে নামছে পারমিটের সংখ্যা
কানাডা সরকার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভিসা অর্ধেকের বেশি কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। আগামী বছর থেকে নতুন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী অনুমতি বা পারমিটের সংখ্যা ৩ লাখ ৫ হাজার ৯০০ থেকে কমিয়ে ১ লাখ ৫০ হাজারে নামিয়ে আনা হবে। ২০২৩ সালেও এ সংখ্যা ৫ লাখেরও উপরে ছিলো।
নতুন বাজেটে লিবারেল সরকার জানিয়েছে, অভিবাসন ব্যবস্থাকে “টেকসই পর্যায়ে” ফিরিয়ে আনতেই এই পদক্ষেপ। অর্থমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া-ফিলিপ শঁপান বলেন, “আমরা অভিবাসন ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ ফের নিচ্ছি, যেন তা টেকসই মাত্রায় ফিরে আসে।”
২০২৪ সালে প্রথমবার শিক্ষার্থী ভিসায় কোটা চালু করা হয়েছিল। সেটি দুই বছরের জন্য প্রস্তাবিত হলেও এখন তা আরও বাড়ছে। বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমায় কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আর্থিক চাপ তৈরি হতে পারে, কারণ তারা দেশীয় শিক্ষার্থীদের তুলনায় অনেক বেশি টিউশন ফি দেন।
সরকার বলেছে, ভবিষ্যতে শুধু সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাই শিক্ষাঋণ পাবেন, ফলে বেসরকারি লাভজনক কলেজগুলো এই সুবিধা হারাবে। এতে চার বছরে সরকারের প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে।
অন্যদিকে, কানাডায় আন্তর্জাতিক গবেষক আকৃষ্ট করতে সরকার নতুন গবেষণা চেয়ার, ল্যাব সরঞ্জাম ও অনুদানে ১.৭ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখছে।
স্থায়ী অভিবাসনের ক্ষেত্রে সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকছে—২০২৬ থেকে ২০২৮ পর্যন্ত প্রতি বছর ৩ লাখ ৮০ হাজার নতুন স্থায়ী বাসিন্দা নেবে কানাডা। এর মধ্যে ২ লাখ ৩৯ হাজার ৮০০ জন অর্থনৈতিক অভিবাসী, ৮৪ হাজার পারিবারিক পুনর্মিলন কর্মসূচিতে, আর বাকি মানবিক ও অন্যান্য বিভাগে আসবেন।
অস্থায়ী অভিবাসী, যেমন বিদেশি শ্রমিক ও শিক্ষার্থী মিলে কানাডার মোট জনসংখ্যার ৭.২ শতাংশ। সরকার ২০২৭ সালের মধ্যে এই হার ৫ শতাংশে নামানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
বর্তমানে দেশটিতে ২.২ মিলিয়ন অভিবাসন আবেদন বিচারাধীন রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৯ লাখ স্থায়ী আবাসনের আবেদন। অনেক ক্ষেত্রে প্রক্রিয়া শেষ হতে ১০ বছর বা তার বেশি সময় লাগছে।
আশ্রয়প্রার্থীরা পরিকল্পনার অংশ নয়
বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা অনিশ্চিত, তাই এদের পরিকল্পনার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তবে ইমিগ্রেশন ও রিফিউজি বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, নতুন আশ্রয় দাবির সংখ্যা কমছে—২০২৪ সালে যেখানে ছিল ১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮০, সেখানে এ বছরের প্রথম নয় মাসে তা ৮৩ হাজার ৪৭০-এ নেমে এসেছে।
তবুও বর্তমানে ২ লাখ ৯৬ হাজার ৩০৯টি মামলা সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে।
যেসব আবেদনকারী আশ্রয়ের মর্যাদা পেয়েছেন, তারা পরবর্তীতে স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন।
সরকার আগামী চার বছরে ১২০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করার প্রস্তাব করেছে, যাতে ইতোমধ্যে অনুমোদিত ব্যক্তিদের দ্রুত স্থায়ী বাসিন্দার মর্যাদা দেওয়া যায়।
২০২৩–২৪ সালের আবাসন সংকট ও ব্যয়ের চাপের প্রেক্ষাপটে এই অভিবাসন কমানোর সিদ্ধান্তকে বিশ্লেষকেরা সরকারের “জনপ্রতিক্রিয়ার জবাব” হিসেবে দেখছেন।

