ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক তিয়ানজিন সফর এবং সেখানে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তাঁর উপস্থিতি এক জটিল ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার চিত্র তুলে ধরে। একদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্কে যখন টানাপোড়েন চলছে, তখন এই দৃশ্য বিশ্বমঞ্চে ভারতের বহুমাত্রিক সম্পর্কের জানান দেয়। তবে এই রাজনৈতিক ছবির আড়ালে রয়েছে এক কঠিন বাস্তবতা, যা ভারতকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের কথায়, ভারতের বিদেশ নীতি কোনো নির্দিষ্ট জোটের প্রতি অন্ধ আনুগত্যের নয়, বরং জাতীয় স্বার্থকে সবার উপরে রেখে কৌশলগত স্বাধীনতা (Strategic Autonomy) বজায় রাখার। এই নীতিতেই ভারত একযোগে চীনা ‘ড্রাগন’-এর আঞ্চলিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং মার্কিন ‘ঈগল’-এর বাণিজ্যিক চাপ সামলানোর চেষ্টা করছে।
চীনের ‘ড্রাগন’: এক জটিল চ্যালেঞ্জ
১. কূটনৈতিক উষ্ণতা, কিন্তু অবিশ্বাস অমীমাংসিত: সাত বছর পর মোদির চীন সফর আপাতদৃষ্টিতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার একটি প্রচেষ্টা। মোদি ও সি চিন পিংয়ের মধ্যে প্রায় এক ঘণ্টার বৈঠকে সরাসরি বিমান চলাচল এবং কৈলাস-মানস সরোবর তীর্থযাত্রা পুনরায় চালু করার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা ইতিবাচক। কিন্তু এই সৌহার্দ্যের পরিবেশ মূল সমস্যাগুলোকে আড়াল করতে পারছে না।
- সীমান্ত বিরোধ: লাদাখের ‘লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল’ (এলএসি) বরাবর উত্তেজনা এখনও অমীমাংসিত। ২০২০ সালের গালওয়ান উপত্যকার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে আস্থার সংকট প্রকট। যদিও ২০২৪ সালের শেষের দিকে কিছু সেনা প্রত্যাহারের চুক্তি হয়েছিল, চীন সীমান্তে দ্রুতগতিতে অবকাঠামো নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে, যা ভারতের জন্য দীর্ঘমেয়াদী উদ্বেগের কারণ।
- কৌশলগত প্রতিবন্ধকতা: চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক, বিশেষ করে ‘চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর’ (সিপিইসি) ভারতের সার্বভৌমত্বের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই করিডরটি পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্য দিয়ে গেছে, যা ভারত তার নিজের ভূখণ্ড বলে দাবি করে। এসসিও সম্মেলনেও মোদি সংযোগ প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে সার্বভৌমত্বকে সম্মান করার ওপর জোর দিয়ে কার্যত সিপিইসি-র প্রতি ভারতের বিরোধিতার কথাই পুনর্ব্যক্ত করেন।
২. অর্থনৈতিক বৈষম্য: ভারত-চীন সম্পর্কের সবচেয়ে দুর্বল দিক হলো বাণিজ্য। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চীনের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি ৯৯.২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ভারত ইলেকট্রনিক্স, ওষুধের কাঁচামাল এবং লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের জন্য চীনের ওপর মারাত্মকভাবে নির্ভরশীল। অন্যদিকে, ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি এবং পরিষেবা সংস্থাগুলো চীনের বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হয়। এই বিপুল অর্থনৈতিক নির্ভরতা চীনের হাতে একটি বড় কৌশলগত অস্ত্র তুলে দিয়েছে।
আমেরিকার ‘ঈগল’: এক পরীক্ষিত অংশীদারিত্ব
১. গভীর কৌশলগত অংশীদারিত্ব: চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক যেখানে অবিশ্বাস ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারিত্বের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। গত দুই দশকে প্রতিরক্ষা, গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়, সন্ত্রাস দমন এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সামুদ্রিক নিরাপত্তার মতো বিষয়ে দুই দেশের সহযোগিতা বেড়েছে।
- কোয়াড জোট: যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের সঙ্গে ‘কোয়াড’ জোটে ভারতের অংশগ্রহণ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলায় একটি স্থিতিশীল ভারসাম্য তৈরির যৌথ প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সাম্প্রতিক বাণিজ্য উত্তেজনা সত্ত্বেও, ভারত এই জোটের প্রতি তার অঙ্গীকার বজায় রেখেছে।
- অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত নির্ভরতা: যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য এবং প্রযুক্তি ও বিনিয়োগের একটি প্রধান উৎস। সেমিকন্ডাক্টর থেকে শুরু করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি পর্যন্ত বিভিন্ন খাতে মার্কিন বিনিয়োগ ভারতের জন্য অপরিহার্য।
২. বাণিজ্যিক মতবিরোধ ও শুল্ক সংকট: তবে এই সম্পর্ক পুরোপুরি নিষ্কণ্টক নয়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ভারতের রাশিয়ান তেল কেনার প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে শীতলতা এনেছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর এই শুল্ককে “অন্যায়” বলে অভিহিত করেছেন এবং জানিয়েছেন যে ভারতের নিজস্ব “রেড লাইন” রয়েছে যা কোনো বাণিজ্য চুক্তিতে অতিক্রম করা যাবে না। তবে এই বিরোধকে কাঠামোগত অংশীদারিত্বের ঊর্ধ্বে না দেখে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা চলছে।
ভবিষ্যতের পথ: জাতীয় স্বার্থই শেষ কথা
প্রধানমন্ত্রী মোদির তিয়ানজিন সফর প্রমাণ করে যে ভারত চীনের সঙ্গে সম্পর্কের আরও অবনতি চায় না। তবে এটি বন্ধুত্বের भ्रमে জড়িয়ে পড়াও নয়। এসসিও-র মঞ্চকে ভারত ব্যবহার করেছে সন্ত্রাসবাদ এবং সার্বভৌমত্বের মতো বিষয়ে তার দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরতে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বিরোধ সত্ত্বেও ভারত কোয়াডের মতো কৌশলগত প্ল্যাটফর্মকে দুর্বল হতে দিতে চায় না। ভারতের বিদেশ নীতির মূল ভিত্তি হলো কোনো একটি শক্তির উপর নির্ভরশীল না হয়ে একাধিক বিকল্প খোলা রাখা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের ভাষায়, অতীতে যেমন মার্কিন-পাকিস্তান-চীন অক্ষের মোকাবিলায় ভারত জাতীয় স্বার্থে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছিল, তেমনি বর্তমানেও জাতীয় স্বার্থই ভারতের পথ চলার নির্দেশক হবে।
চূড়ান্তভাবে, সম্মেলনের চাকচিক্য বা নেতাদের করমর্দনের চেয়ে কৌশলগত বাস্তবতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। চীনের ‘ড্রাগন’ হাত মেলালেও তার আগ্রাসী উদ্দেশ্য স্পষ্ট। আর আমেরিকার ‘ঈগল’ বাণিজ্য নিয়ে চাপ সৃষ্টি করলেও কৌশলগতভাবে ভারতের পাশেই রয়েছে। এই দুই শক্তির সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করে চলাই ভারতের কূটনীতির সবচেয়ে বড় পরীক্ষা, যেখানে দূরদর্শিতাই হবে মূল চালিকাশক্তি।বিশ্লেষণ: ভারত কীভাবে চীনা ‘ড্রাগন’ ও মার্কিন ‘ঈগল’কে সামলাবে
ভূমিকা: কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের পরীক্ষা
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক তিয়ানজিন সফর এবং সেখানে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তাঁর উপস্থিতি এক জটিল ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার চিত্র তুলে ধরে। একদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্কে যখন টানাপোড়েন চলছে, তখন এই দৃশ্য বিশ্বমঞ্চে ভারতের বহুমাত্রিক সম্পর্কের জানান দেয়। তবে এই রাজনৈতিক ছবির আড়ালে রয়েছে এক কঠিন বাস্তবতা, যা ভারতকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের কথায়, ভারতের বিদেশ নীতি কোনো নির্দিষ্ট জোটের প্রতি অন্ধ আনুগত্যের নয়, বরং জাতীয় স্বার্থকে সবার উপরে রেখে কৌশলগত স্বাধীনতা (Strategic Autonomy) বজায় রাখার। এই নীতিতেই ভারত একযোগে চীনা ‘ড্রাগন’-এর আঞ্চলিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং মার্কিন ‘ঈগল’-এর বাণিজ্যিক চাপ সামলানোর চেষ্টা করছে।
চীনের ‘ড্রাগন’: এক জটিল চ্যালেঞ্জ
১. কূটনৈতিক উষ্ণতা, কিন্তু অবিশ্বাস অমীমাংসিত: সাত বছর পর মোদির চীন সফর আপাতদৃষ্টিতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার একটি প্রচেষ্টা। মোদি ও সি চিন পিংয়ের মধ্যে প্রায় এক ঘণ্টার বৈঠকে সরাসরি বিমান চলাচল এবং কৈলাস-মানস সরোবর তীর্থযাত্রা পুনরায় চালু করার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা ইতিবাচক। কিন্তু এই সৌহার্দ্যের পরিবেশ মূল সমস্যাগুলোকে আড়াল করতে পারছে না।
- সীমান্ত বিরোধ: লাদাখের ‘লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল’ (এলএসি) বরাবর উত্তেজনা এখনও অমীমাংসিত। ২০২০ সালের গালওয়ান উপত্যকার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে আস্থার সংকট প্রকট। যদিও ২০২৪ সালের শেষের দিকে কিছু সেনা প্রত্যাহারের চুক্তি হয়েছিল, চীন সীমান্তে দ্রুতগতিতে অবকাঠামো নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে, যা ভারতের জন্য দীর্ঘমেয়াদী উদ্বেগের কারণ।
- কৌশলগত প্রতিবন্ধকতা: চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক, বিশেষ করে ‘চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর’ (সিপিইসি) ভারতের সার্বভৌমত্বের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই করিডরটি পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্য দিয়ে গেছে, যা ভারত তার নিজের ভূখণ্ড বলে দাবি করে। এসসিও সম্মেলনেও মোদি সংযোগ প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে সার্বভৌমত্বকে সম্মান করার ওপর জোর দিয়ে কার্যত সিপিইসি-র প্রতি ভারতের বিরোধিতার কথাই পুনর্ব্যক্ত করেন।
২. অর্থনৈতিক বৈষম্য: ভারত-চীন সম্পর্কের সবচেয়ে দুর্বল দিক হলো বাণিজ্য। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চীনের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি ৯৯.২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ভারত ইলেকট্রনিক্স, ওষুধের কাঁচামাল এবং লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের জন্য চীনের ওপর মারাত্মকভাবে নির্ভরশীল। অন্যদিকে, ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি এবং পরিষেবা সংস্থাগুলো চীনের বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হয়। এই বিপুল অর্থনৈতিক নির্ভরতা চীনের হাতে একটি বড় কৌশলগত অস্ত্র তুলে দিয়েছে।
আমেরিকার ‘ঈগল’: এক পরীক্ষিত অংশীদারিত্ব
১. গভীর কৌশলগত অংশীদারিত্ব: চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক যেখানে অবিশ্বাস ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারিত্বের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। গত দুই দশকে প্রতিরক্ষা, গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়, সন্ত্রাস দমন এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সামুদ্রিক নিরাপত্তার মতো বিষয়ে দুই দেশের সহযোগিতা বেড়েছে।
- কোয়াড জোট: যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের সঙ্গে ‘কোয়াড’ জোটে ভারতের অংশগ্রহণ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলায় একটি স্থিতিশীল ভারসাম্য তৈরির যৌথ প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সাম্প্রতিক বাণিজ্য উত্তেজনা সত্ত্বেও, ভারত এই জোটের প্রতি তার অঙ্গীকার বজায় রেখেছে।
- অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত নির্ভরতা: যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য এবং প্রযুক্তি ও বিনিয়োগের একটি প্রধান উৎস। সেমিকন্ডাক্টর থেকে শুরু করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি পর্যন্ত বিভিন্ন খাতে মার্কিন বিনিয়োগ ভারতের জন্য অপরিহার্য।
২. বাণিজ্যিক মতবিরোধ ও শুল্ক সংকট: তবে এই সম্পর্ক পুরোপুরি নিষ্কণ্টক নয়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ভারতের রাশিয়ান তেল কেনার প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে শীতলতা এনেছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর এই শুল্ককে “অন্যায়” বলে অভিহিত করেছেন এবং জানিয়েছেন যে ভারতের নিজস্ব “রেড লাইন” রয়েছে যা কোনো বাণিজ্য চুক্তিতে অতিক্রম করা যাবে না। তবে এই বিরোধকে কাঠামোগত অংশীদারিত্বের ঊর্ধ্বে না দেখে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা চলছে।
ভবিষ্যতের পথ: জাতীয় স্বার্থই শেষ কথা
প্রধানমন্ত্রী মোদির তিয়ানজিন সফর প্রমাণ করে যে ভারত চীনের সঙ্গে সম্পর্কের আরও অবনতি চায় না। তবে এটি বন্ধুত্বের भ्रमে জড়িয়ে পড়াও নয়। এসসিও-র মঞ্চকে ভারত ব্যবহার করেছে সন্ত্রাসবাদ এবং সার্বভৌমত্বের মতো বিষয়ে তার দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরতে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বিরোধ সত্ত্বেও ভারত কোয়াডের মতো কৌশলগত প্ল্যাটফর্মকে দুর্বল হতে দিতে চায় না। ভারতের বিদেশ নীতির মূল ভিত্তি হলো কোনো একটি শক্তির উপর নির্ভরশীল না হয়ে একাধিক বিকল্প খোলা রাখা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের ভাষায়, অতীতে যেমন মার্কিন-পাকিস্তান-চীন অক্ষের মোকাবিলায় ভারত জাতীয় স্বার্থে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছিল, তেমনি বর্তমানেও জাতীয় স্বার্থই ভারতের পথ চলার নির্দেশক হবে।
চূড়ান্তভাবে, সম্মেলনের চাকচিক্য বা নেতাদের করমর্দনের চেয়ে কৌশলগত বাস্তবতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। চীনের ‘ড্রাগন’ হাত মেলালেও তার আগ্রাসী উদ্দেশ্য স্পষ্ট। আর আমেরিকার ‘ঈগল’ বাণিজ্য নিয়ে চাপ সৃষ্টি করলেও কৌশলগতভাবে ভারতের পাশেই রয়েছে। এই দুই শক্তির সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করে চলাই ভারতের কূটনীতির সবচেয়ে বড় পরীক্ষা, যেখানে দূরদর্শিতাই হবে মূল চালিকাশক্তি।
লেখক: শশী থারুর, ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমানে দেশটির লোকসভার কংগ্রেসদলীয় এমপি।

