গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে কানাডায় ইসলামবিদ্বেষ এবং ফিলিস্তিনবিরোধী বর্ণবাদ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ইসলামোফোবিয়া রিসার্চ হাবের প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে এই ধরনের বিদ্বেষমূলক ঘটনা ক্ষেত্রবিশেষে ১৮০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
প্রতিবেদনটির গবেষক নাদিয়া হাসান অটোয়ায় এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য তুলে ধরেন। ন্যাশনাল কাউন্সিল অব কানাডিয়ান মুসলিমস (এনসিসিএম)-এর তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরের পরের প্রথম মাসেই ইসলামবিদ্বেষ সংক্রান্ত অভিযোগ ১৩০০ শতাংশ বেড়েছিল, যা পরবর্তী সময়ে ১৮০০ শতাংশে পৌঁছায়। অন্যদিকে, টরন্টো পুলিশের হিসাব মতে, ৭ অক্টোবর থেকে ২০ নভেম্বরের মধ্যে ইসলামোফোবিক ও ফিলিস্তিনবিরোধী অপরাধ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই বিদ্বেষের কারণে বহু মানুষ বাস্তব জীবনে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। মুসলিম লিগ্যাল সাপোর্ট সেন্টার জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের মার্চের মধ্যে তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ৪৭৪টি অভিযোগ পেয়েছে। এর মধ্যে ৩৪৫ জন ব্যক্তি ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় চাকরি হারিয়েছেন বা সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়েছেন। এছাড়া, লিগ্যাল সেন্টার ফর প্যালেস্টাইন জানিয়েছে, গত আট মাসে ফিলিস্তিনবিরোধী বর্ণবাদের অভিযোগ ৬০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
নাদিয়া হাসান বলেন, “অক্টোবরের ঘটনার পর কানাডায় ইসলামবিদ্বেষ, ফিলিস্তিনবিরোধী এবং আরব-বিরোধী বর্ণবাদের প্রভাব জীবনের নানা ক্ষেত্রে পড়ছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “এই প্রতিবেদনে আসলে বাস্তব পরিস্থিতির মাত্র একটি অংশ তুলে ধরা হয়েছে।”
কানাডায় ইসলামোফোবিয়া মোকাবিলার জন্য নিযুক্ত বিশেষ প্রতিনিধি আমিরা এলঘাওয়াবি এই পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “ফিলিস্তিনি মানবাধিকার রক্ষার পক্ষে কথা বলায় মানুষকে চাকরি হারাতে হচ্ছে, ভবিষ্যত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে— এসব পরিস্থিতি এখনই মোকাবিলা করা দরকার।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “৯/১১-পরবর্তী সময়ের পুরোনো অপপ্রচারের ধারা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, যা এখন কট্টর ডানপন্থি গোষ্ঠী ও অন্যদের মাধ্যমে নতুন করে মুসলিম, ফিলিস্তিনি ও আরব-কানাডীয়দের অবমাননার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।”
গবেষণা প্রতিবেদনটি কানাডার ১৬টি সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা এবং সরকারি ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।

