বিবিসির এক অনুসন্ধানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে এক উগান্ডান তরুণীর রহস্যজনক মৃত্যুর সঙ্গে একটি যৌন শোষণ চক্রের সংশ্লিষ্টতা উঠে এসেছে। ২০২২ সালের ১ মে মোনিক কারুঙ্গি নামের ওই তরুণী একটি সুউচ্চ ভবন থেকে পড়ে মারা যান। দুবাই পুলিশ ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করলেও, তার পরিবার ও বন্ধুরা বিষয়টির অধিকতর তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তদন্তে এই মৃত্যুর সঙ্গে চার্লস মোসিগা নামের এক ব্যক্তির পরিচালিত যৌনচক্রের যোগসূত্র পাওয়া গেছে।
বোন রিতার তথ্যমতে, মোনিক কারুঙ্গি দুবাই গিয়েছিলেন একটি সুপারমার্কেটে কাজ করার স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর পর তিনি মোসিগার খপ্পরে পড়েন এবং আরও প্রায় ৫০ জন মেয়ের সঙ্গে একটি ফ্ল্যাটে থাকতে বাধ্য হন। কেইরা (ছদ্মনাম) নামের এক নারী, যিনি মোনিকের সঙ্গে ওই ফ্ল্যাটে থাকতেন, সেটিকে একটি ‘বাজারের মতো’ বলে বর্ণনা করেছেন।
চক্রে আটকে পড়া নারীদের ভাষ্যমতে, মোসিগা তাদের বিপুল পরিমাণ ঋণের বোঝায় জর্জরিত করতেন। মোনিকের এক আত্মীয় মাইকেল (ছদ্মনাম) বিবিসিকে জানান, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই মোসিগার কাছে মোনিকের প্রায় ২৭ হাজার ডলারের ঋণ তৈরি হয়েছিল, যা নিয়ে মোনিক প্রায়ই ভয়েস নোটে কান্না করতেন। চক্রের আরেক শিকার ‘মিয়া’ (ছদ্মনাম) জানান, মোসিগা তাকে বলেছিলেন যে তার ২,৭১১ ডলার ঋণ রয়েছে, যা সময়মতো পরিশোধ না করলে দ্বিগুণ হয়ে যাবে।
মৃত্যুর কিছুদিন আগেই মোনিক এই চক্র থেকে বেরিয়ে আসার একটি পথ খুঁজে পেয়েছিলেন। মিয়া জানান, মোনিক একটি নতুন চাকরি পেয়েছিলেন এবং ঘৃণ্য জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় উচ্ছ্বসিত ছিলেন। তিনি মোসিগার ফ্ল্যাট ছেড়ে অন্য একটি ভবনে ওঠেন, কিন্তু এর চারদিন পরেই তার মৃত্যু হয়।
দুবাই পুলিশ মোনিকের বাসা থেকে মাদক ও অ্যালকোহল পাওয়ার কথা উল্লেখ করে তদন্ত বন্ধ করে দেয়। তারা জানায়, বারান্দায় শুধু মোনিকেরই আঙুলের ছাপ ছিল। তবে হাসপাতাল থেকে পাওয়া মৃত্যু সনদে তার মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করা ছিল না।
বিবিসির অনুসন্ধানে এই চক্রের প্রধান হিসেবে চার্লস মোসিগাকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যিনি নিজেকে লন্ডনের সাবেক বাসচালক হিসেবে পরিচয় দেন। মোসিগা অবশ্য তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছেন, তিনি কেবল নারীদের বাসা খুঁজে পেতে সহায়তা করেন।
ভুক্তভোগী নারীরা জানান, তাদের ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গ গ্রাহকদের কাছে পাঠানো হতো, যাদের অনেকেরই বিকৃত যৌন চাহিদা ছিল। লেক্সি (ছদ্মনাম) নামের আরেক নারী জানান, কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ার কারণে তাকে বর্ণবিদ্বেষমূলক আচরণের শিকার হতে হয়েছে। তিনি পুলিশের সাহায্য চেয়েও পাননি।
সবচেয়ে মর্মান্তিক বিষয় হলো, মোনিকের পরিবার তার মরদেহ পায়নি। বিবিসির অনুসন্ধান অনুযায়ী, তাকে দুবাইয়ের আলকুসাইস কবরস্থানের ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ অংশে দাফন করা হয়েছে। এই বিষয়ে জানতে চেয়ে বিবিসির পক্ষ থেকে দুবাই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো সাড়া দেয়নি।

