বিএনপি ও জামায়াত কোন কোন গণমাধ্যমকে কিভাবে ব্যবহার/ম্যানেজ/নিয়ন্ত্রণ করছে আর সেই গণমাধ্যমগুলো কিভাবে তাঁদের পলিটিকাল এজেনডা বাস্তবায়ন করছে? গণমাধ্যমের এজেনডা সেটিং ও বিষয়বস্তু উপস্থাপনের কায়দা-কানুন অবলোকনের এক দারুণ প্রেক্ষাপট চলছে বাংলাদেশে।
বলে নেয়া ভালো, গণমাধ্যমের এজেন্ডা সেটিং হলো সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মিডিয়া তাদের নিজস্ব এজেন্ডা তৈরি করে এবং জনগণের মনোযোগ আকর্ষণ করে। গণমাধ্যম যেসব বিষয়কে গুরুত্ব দেয়, সেগুলোই জনগণের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়। সহজ কথায়, মিডিয়া নির্ধারণ করে কোন বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে, আলোচনাটা কিভাবে হবে, এবং কোন বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ, আর সেই সিদ্ধান্তগুলি জনমতকে প্রভাবিত করে। কমেন্টে কয়েকটি খবর সংযুক্ত করা হয়েছে। ক্লিক করুন, পড়ুন। ভাবুন। একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে “ফেসবুকে ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ প্রতিযোগিতাকে কেউ কেউ অনেকটা মজা হিসেবে নিয়েছেন।”
এখন এই প্রশ্ন অবান্তর যে কেন গণভোট? কি প্রয়োজনে? এটা সবাই জানে! ধরে নেয়া হয়েছে গণভোট না হলে মহাবিপদ! বৈধতার একমাত্র অবলম্বন এখন গণভোট। সুতরাং, এটা হতেই হবে। লক্ষ কোটি টাকা খরচ যায় যাক! বিএনপি যতই বলুক যে জাতীয় নির্বাচনের দিন এক সাথে গণভোট করতে সেটা যে করা হবেনা তা বোঝা যায় আইন উপদেষ্টার কথায়। তিনি সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন — জুলাই সনদের বিষয়বস্তু নিয়ে বিরোধ ছিল। এখন আরও দুই ধরনের বিরোধ তৈরি হয়েছে। একটা হচ্ছে, কী পদ্ধতিতে পাস করা হবে। আরেকটি হচ্ছে, গণভোট হলে, গণভোট কবে হবে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দুটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছে। একটা হচ্ছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ, গণভোট, তারপর ২৭০ দিনের মধ্যে না হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধান সংশোধন হয়ে যাবে। দ্বিতীয় প্রস্তাব হলো, এই দায়দায়িত্ব নির্বাচিত সংসদের হাতে ছেড়ে দেওয়া। গণভোট কবে হবে, এটা নিয়ে বিরোধ তীব্রতম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। একটা সময়ে এটা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান উপদেষ্টা।
বিএনপির অবশেষে বুঝতে পেরেছে যে তাঁদের বিশ্বাস করা হচ্ছেনা আর সরকারও বুঝিয়ে দিয়েছে বিএনপিকে বিশ্বাস করা যায়না। রুদ্রের ভাষায় বললে-
“বেশ্যাকে তবু বিশ্বাস করা চলে
রাজনীতিকের ধমনী শিরায় সুবিধাবাদের পাপ
বেশ্যাকে তবু বিশ্বাস করা চলে
বুদ্ধিজীবীর রক্তে স্নায়ুতে সচেতন অপরাধ
বেশ্যাকে তবু বিশ্বাস করা চলে
জাতির তরুন রক্তে পুষেছে নির্বীর্যের সাপ-“
লন্ডনে তারেক রহমান যে ব্ল্যাংক চেক সমর্থন ড, ইউনুসকে দিয়েছিলেন তার শেষ পরীক্ষা এই গণভোট প্রসঙ্গ। বিএনপির মহাসচিবের ফেসবুক পেইজে পোস্ট দেয়া হয়েছিল ১১ ঘণ্টা আগে – “জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো বিশাল আয়োজনের বিবেচনায় নির্বাচনের পূর্বে গণভোট অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক এবং অবিবেচনা প্রসূত।… … জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেয়া সুপারিশ একপেশে এবং তা জাতির ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।”
বিএনপি’র মিডিয়া সেল গত কয়েক ঘণ্টায় বেশ কিছু ইংরেজি পোস্ট দিয়েছে। বাংলায় বলার পরও যারা বুঝতে পারছেনা, বিএনপি তাদেরকে ইংরেজি ভাষায় বার্তা দিতে চাইছে! ইংরেজিভাষীদের তাঁরা বলতে চাইছেন গণভোট জাতীয় নির্বাচনের দিন হতে হবে, আগে নয়। কিন্তু নিয়ন্ত্রণের ট্রেন কি আর স্টেশনে আছে? নিয়ন্ত্রণ আর নির্বাচনের সব ট্রেন কে নিয়ে চলে গেছে?
ফরিদ আহমেদ, সাংবাদিক

