আলোচিত জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর আয়োজন আজ শুক্রবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। জনসাধারণের অংশগ্রহণের সুবিধার্থে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এ অনুষ্ঠান আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসসহ সকল উপদেষ্টা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের এ আয়োজনে উপস্থিত হবার কথা রয়েছে।
তবে, জুলাই আন্দোলন যাদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয়েছে পরবর্তীতে তাদের নিয়ে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে না । বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতে ফেসবুকে এনসিপির মিডিয়া গ্রুপে এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
রাত ২টা ৪ মিনিটে এনসিপির মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন তাদের মিডিয়া গ্রুপে দেওয়া বার্তায় লিখেছেন, ‘জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অংশগ্রহণ করবে না।’ ফলে শুক্রবার বিকেলের ওই অনুষ্ঠানে সব দলের অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও জোরালো হয়েছে।
তবে এনসিপিকে রাজি করাতে বৃহস্পতিবার দিনভর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সরকারের দিক থেকে নানা তৎপরতা চলেছে। সর্বশেষ রাতেও এনসিপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সরকারের একাধিক উপদেষ্টার আলোচনা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এনসিপি কিছুটা নমনীয় হয়েছে। ঐকমত্য কমিশন আশা করছে, দলটির নেতারা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন এবং সনদে সই করবেন। তবে কোনো পক্ষ থেকেই এ বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
আট মাস ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর প্রস্তুত করা জুলাই সনদে সই করার জন্য শুক্রবার ১৭ অক্টোবর দিন ধার্য করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর দুই দিন আগে মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়। ওই রাতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করেন এনসিপির শীর্ষ নেতা।
এনসিপির এমন অবস্থান ও সার্বিক পরিস্থিতিতে সনদ স্বাক্ষর নিয়ে সংশয়ে পড়ে ঐকমত্য কমিশন। তারা ৩০টি দলকে চিঠি দিয়ে বুধবার সন্ধ্যা ছয়টায় ‘অতি জরুরি’ বৈঠক করে। সন্ধ্যার ওই বৈঠকের আগে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করেন বলে জানা গেছে। তবে তাতেও খুব একটা ফল হয়নি বলে জানা গেছে। মূলত জুলাইয়ের পক্ষের দলগুলোকেই এতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আর ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ তাদের সমমনা ১৪ দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অবশ্য বিগত সরকারের সহযোগী নয়, নিবন্ধিত এমন বেশ কিছু দলকেও ডাকা হয়নি বলে অভিযোগ আছে। আবার দেশের প্রধান বাম দল সিপিবিও এ অনুষ্ঠান বর্জন করেছে।
জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষায় বিদ্যমান সংবিধান সংস্কারের লক্ষ্যে ২০২৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি ও অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজকে সহ-সভাপতি করে এই জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। প্রথম দফায় ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। ১০ মার্চ থেকে প্রথম দফায় শুধু একটি একটি করে দল অংশগ্রহণ করে। ১৯ মে এ ধাপের বৈঠক শেষ হয়।
পরবর্তীকালে জুনের প্রথম সপ্তাহে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে শুরু হওয়া দ্বিতীয় ধাপের ২৩ কার্য দিবসের আলোচনা শেষ হয় ৩১ জুলাই।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম দুই ধাপের সংলাপের ভিত্তিতে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত ভাষ্য তৈরি করে কমিশন। এরপর সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে গত ১১ সেপ্টেম্বর তৃতীয় ধাপের বৈঠক শুরু করে কমিশন।
এরই মধ্যে গত ১৭ সেপ্টেম্বর দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বিশেষজ্ঞদের প্রস্তাব তুলে ধরেছিল কমিশন। সে প্রস্তাবে বলা হয়, মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার একটি ‘সংবিধান আদেশ’ জারি করতে পারে। এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। এরপর আদেশটি নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একইসঙ্গে গণভোট করা যেতে পারে।
সর্বশেষ গত ৫ অক্টোবর গণভোটের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো মোটামুটি ঐকমত্য পোষণ করে। সেক্ষেত্রে গণভোট জাতীয় নির্বাচনের আগে হবে না ভোটের দিন হবে, তা নিয়ে মতানৈক্য হয়।ধারণা করা হয়, এই গণভোট কবে হবে- তা নিয়ে বড় বিভেদ ও অস্থিরতা বয়ে আসতে পারে রাজনীতির মাঠে।

