ইসলাম ধর্মে উপাসনার অন্যতম ভিত্তি হিসেবে নামাজকে বিবেচনা করা হয়, যা মুসলমান ব্যক্তিকে সব ধরনের অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করে। আন্তরিকতার সঙ্গে আদায় করা নামাজ বান্দার জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনের সুরা আন কাবুতের ৪৪ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে দূরে রাখে।’
নামাজের এই পরিশুদ্ধকারী ভূমিকা বোঝাতে মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি উপমা দিয়েছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবাদের জিজ্ঞাসা করেন, কারও বাড়ির দরজায় যদি একটি নদী থাকে এবং সে সেখানে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে, তবে তার শরীরে কি কোনো ময়লা থাকতে পারে? সাহাবারা উত্তর দেন, না, কোনো ময়লা থাকবে না। তখন তিনি বলেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ হলো এর দৃষ্টান্ত। নামাজের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা পাপ মুছে দেন’ (বুখারি ও মুসলিম)।
এভাবেই নামাজ একজন বিশ্বাসীর জন্য আধ্যাত্মিক গোসলের মতো কাজ করে, যা আত্মার কালিমা দূর করে দেয়। এই ইবাদতের মাধ্যমে মানুষ আধ্যাত্মিকভাবে ধাপে ধাপে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে। এ কারণেই মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘আস্সালাতু মিরাজুল মুমিনিন।’ অর্থাৎ, নামাজ মুমিনের জন্য মিরাজস্বরূপ। জাগতিক জীবনের অস্থিরতা থেকে মুক্তি লাভের উপায় হিসেবেও নামাজকে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইসলামে নামাজকে ধর্মের স্তম্ভ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল কোনটি জিজ্ঞাসা করলে উত্তরে তিনি বলেন, ‘নামাজ’ (বুখারি ও মুসলিম)। পবিত্র কুরআনের সুরা নিসার ১০২ নম্বর আয়াতে নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ আদায়ের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয় মুমিনদের জন্য নামাজ সময় মত পড়া ফরজ করা হয়েছে’।
শুধু নামাজই নয়, এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আমলও পাপ মোচন এবং মর্যাদা বৃদ্ধিতে সহায়ক। একটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ভালোভাবে ওজু করা, দূর থেকে হেঁটে মসজিদে আসা এবং এক নামাজের পর পরবর্তী নামাজের জন্য অপেক্ষা করা—এসব কাজ আল্লাহতায়ালা পাপ মিটিয়ে দেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন (মুসলিম)।
মূলত, মানব ও জ্বিন জাতিকে আল্লাহর ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে, যা পবিত্র কুরআনের সুরা যারিয়াতের ৫৬ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। আর সব ইবাদতের মধ্যে নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম, কারণ এটি একজন মুমিনকে পরিশুদ্ধ করে নীতিবান মানুষে পরিণত হতে সাহায্য করে।

